রাঙামাটি প্রতিনিধি: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আয়োজনে রাঙ্গামাটির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে পুস্পস্তবক অর্পনসহ আলোচনা সভা করা হয়।পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা এর নেতৃত্বে ৬.২০ টায় রাঙ্গামাটির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, রাঙ্গামাটি সদর উপজেল ও বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুস্পস্তবক অর্পন করা হয়।
এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আলম চৌধুরী (অতিরিক্ত সচিব), সদস্য প্রশাসন ইফতেখার আহমেদ (যুগ্মসচিব), সদস্য পরিকল্পনা মোঃ জসীম উদ্দিন (উপসচিব), বোর্ডের উপপরিচালক মংছেনলাইন রাখাইন, নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব তুষিত চাকমাসহ সর্বস্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
সকাল ১০ টায় বোর্ডের প্রধান কার্যালয়স্থ মাইনী মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কমার চাকমা এর সভাপতিত্বে মহান বিজয় দিবস ২০২২ এর কর্মসূচির অংশ হিসেবে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বোর্ডের গবেষণা কর্মকর্তা কাইংওয়াই ম্রো এর উপস্থাপনায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ স্বাধীনতা মহান স্থপতি বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল বীর শহীদ, জীবিত মুক্তিযোদ্ধা ও দুই লক্ষ সম্ভ্রম হারানো মা বোনদের প্রতি গভীর বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন ও ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আলোচনা শুরুতে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের উপস্থিতিতে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
চেয়ারম্যান বলেন যে, নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মাধ্যমে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠিত করতে পারা পৃথিবীতে বিরল ঘটনা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিশ্ববাসী বাংলাদেশ হিসেবে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।
তিনি আরোও বলেন যে, আমরা একটি স্বাধীন ও সার্বভেীম রাষ্ট্র পেয়েছি, এটি সত্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন মুক্তিযুদ্ধ চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিশ^াসী বিরোধীরা উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে বিঘিœত করার জন্য প্রকাশে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তিনি এসব ষড়যন্ত্রকারী স্বাধীনতা বিরোধী কুচক্রী মহলকে চিহ্নি করে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানসহ নতুন প্রজন্মদের এ বিষয়ে সজাগ থাকার আহবান জানান।
বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান বলেন যে, পাক বাহিনীরা বাংলার মানুষকে সীমাহীনভাবে শোষন করতো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ বিষয়টি অন্তর দিয়ে উপলব্ধী করতে পেরেছিলেন। তাই পাক বাহিনীদের শোষনের হাত থেকে বাংলার মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্য বিভিন্ন সময় তিনি আন্দোলনে নেতৃত্বে দেন। বঙ্গবন্ধু’র ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ”এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম…” স্লোগানের মাধ্যমে বাংলার মানুষ উজ্জীবিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাক বাহিনীদের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলার মাধ্যম অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। এছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধু’র সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি মৌলিক স্তম্ভ-স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনামি, স্মার্ট গর্ভনমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে এ চারটি মৌলিক স্তম্ভকে যথাযথভাবে বাস্তবায়নে সকলকে একসাথে কাজ করার আহবান জানান।
এসময় বোর্ডের সদস্য প্রশাসন ইফতেখার আহমেদ, সদস্য পরিকল্পনা মোঃ জসীম উদ্দিন, বোর্ডের উপপরিচালক মংছেনলাইন রাখাইন, রাঙ্গামাটি নির্বাহী প্রকৗশলী তুষিত চাকমা, টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের জেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক মন্জু মানষ ত্রিপুরা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোঃ জাকির হোসেন প্রমুখ মহান বিজয় দিবসের তাৎপর্য হিসেবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করেন। মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বার্ডের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের অংশগ্রহণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় সকালে রাঙ্গামাটির তবলছড়িস্থ আনন্দ বৌদ্ধ বিহারে বিশেষ প্রার্থনা, দুপুরে বোর্ডের জামে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া মাহ্ফিলসহ তবারক বিতরণ এবং সন্ধ্যায় তবলছড়িস্থ শ্রী শ্রী রক্ষা কালি মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে সকাল ৯ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রথমবারের মতো অস্থায়ীভাবে নির্মিত স্মৃতিসৌধ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পনের মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচী শুরু হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে একটি বর্নাঢ্য র্যালী ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করে দীপংকর তালুকদার একাডেমিক ভবনের সম্মুখে এসে শেষ হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ইউসুফ -এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সেলিনা আখতার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. কাঞ্চন চাকমা। আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানগণ, শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাঁদের এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাগনের অবদানের কথা স্মরণ করে আগামীর উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। মাননীয় উপাচার্য প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা গভীরভাবে স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত ও অদম্য নেতৃত্বের কথা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ও দূরদর্শী স্বপ্নের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন “এটা ঠিক আমাদের সম্পদ সীমিত কিন্তু চাহিদা অনেক। তবে সুষ্টু ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে আমরা এগিয়ে যাব এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের এ বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাব। এক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ সকলেই সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য বলেন – “চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবেলা করতে হবে এবং মৌলবাদী শক্তি যেনো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ”
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে, তাদের মেধা, মনন ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে।
অনুষ্ঠান শেষে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত ফুটবল টুর্নামেন্টের বিজয়ী ও রানার্সআপ দলের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।